জকিগঞ্জ ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জকিগঞ্জে সবজির দাম আকাশছোঁয়া: ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ

জকিগঞ্জের স্থানীয় বাজারগুলোতে বর্তমানে সবজির দাম আকাশচুম্বী।

বাজারে নানান ধরনের সবজির ছড়াছড়ি থাকলেও অধিকাংশের দামই সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষেরা মাছ ও মাংসের দাম বাড়ার কারণে যেখানে সবজির ওপর ভরসা করে, সেখানে সবজির এই ঊর্ধ্বমুখী দাম তাঁদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, সবজির মৌসুম প্রায় চলে এলেও দাম না কমে উল্টো বাড়ছে, যা এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি।উপজেলার জকিগঞ্জ, কালিগঞ্জ, শাহগলি, বাবুর বাজার, সোনাসার ও শরীফগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সবজিই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এই দামের লাগামহীন বৃদ্ধি দেখে হতাশ ক্রেতারা।

কোন সবজি কত দামে বিক্রি হচ্ছে?

জকিগঞ্জের বাজারগুলোতে বর্তমানে সবজির দামের চিত্র নিম্নরূপ:বাঁধাকপি ৭০-৮০ টাকা (প্রতি পিস) শিম ১৮০ টাকা (প্রতি কেজি) মূলা ৭০ টাকা (প্রতি কেজি) লুভী/উড়ি ৮০ টাকা (প্রতি কেজি)ঝিঙা ৭০ টাকা (প্রতি কেজি) দেশি লাউ ৬০-৮০ টাকা (সাইজভেদে)চাল কুমড়া ৬০-৮০ টাকা (সাইজভেদে)শসা ৬০ টাকা (প্রতি কেজি)তালিকা থেকে স্পষ্ট, হাতেগোনা কয়েকটি সবজি ছাড়া বাকি সবজির দামই কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে এমনকি নতুন করে বাজারে আসতে শুরু করা সবজির দামও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

বিভিন্ন সবজি বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। স্থানীয় এক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, “যেভাবে সবজির দাম বাড়ছে, তাতে কোনো উপায় দেখছি না। এখন তো মৌসুম আসছে, দাম ধীরে ধীরে কমার কথা, কিন্তু উল্টোটা হচ্ছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের।”

আরেকজন নিম্ন আয়ের ক্রেতা বলেন, “মাছ-মাংস কেনা তো দূরের কথা, এখন সবজি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিবারের পুষ্টির জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা মূলত বৃষ্টিপাত এবং সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন।

জকিগঞ্জ বাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, এবছর অসময়ের বৃষ্টির কারণে খেত-খামারে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বাজারে এখনো সবজির সরবরাহ কম। এ কারণেই দাম কিছুটা বেশি। তবে আশা করছি, আর কিছুদিনের মধ্যেই নতুন মৌসুমের সবজি বাজারে পুরোদমে আসা শুরু করলে দাম কিছুটা কমবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুম পরিবর্তনের এই সময়ে পুরোনো সবজির সরবরাহ কমে যায় এবং নতুন সবজি পুরোপুরি বাজারে আসতে কিছুটা সময় লাগে। এ ছাড়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেও অনেক সময় স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।এই পরিস্থিতিতে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফিরে আসবে। সব মিলিয়ে, জকিগঞ্জের সবজি বাজারে বিরাজ করছে এক অস্বস্তিকর অবস্থা, যেখানে দামের ঊর্ধ্বগতিতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

ট্যাগস :

জকিগঞ্জ উপজেলা খেলাফত মজলিসের দায়িত্বশীল বৈঠক অনুষ্ঠিত

জকিগঞ্জে সবজির দাম আকাশছোঁয়া: ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ

আপডেট সময় : ০১:২২:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

জকিগঞ্জের স্থানীয় বাজারগুলোতে বর্তমানে সবজির দাম আকাশচুম্বী।

বাজারে নানান ধরনের সবজির ছড়াছড়ি থাকলেও অধিকাংশের দামই সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষেরা মাছ ও মাংসের দাম বাড়ার কারণে যেখানে সবজির ওপর ভরসা করে, সেখানে সবজির এই ঊর্ধ্বমুখী দাম তাঁদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, সবজির মৌসুম প্রায় চলে এলেও দাম না কমে উল্টো বাড়ছে, যা এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি।উপজেলার জকিগঞ্জ, কালিগঞ্জ, শাহগলি, বাবুর বাজার, সোনাসার ও শরীফগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সবজিই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এই দামের লাগামহীন বৃদ্ধি দেখে হতাশ ক্রেতারা।

কোন সবজি কত দামে বিক্রি হচ্ছে?

জকিগঞ্জের বাজারগুলোতে বর্তমানে সবজির দামের চিত্র নিম্নরূপ:বাঁধাকপি ৭০-৮০ টাকা (প্রতি পিস) শিম ১৮০ টাকা (প্রতি কেজি) মূলা ৭০ টাকা (প্রতি কেজি) লুভী/উড়ি ৮০ টাকা (প্রতি কেজি)ঝিঙা ৭০ টাকা (প্রতি কেজি) দেশি লাউ ৬০-৮০ টাকা (সাইজভেদে)চাল কুমড়া ৬০-৮০ টাকা (সাইজভেদে)শসা ৬০ টাকা (প্রতি কেজি)তালিকা থেকে স্পষ্ট, হাতেগোনা কয়েকটি সবজি ছাড়া বাকি সবজির দামই কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে এমনকি নতুন করে বাজারে আসতে শুরু করা সবজির দামও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

বিভিন্ন সবজি বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। স্থানীয় এক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, “যেভাবে সবজির দাম বাড়ছে, তাতে কোনো উপায় দেখছি না। এখন তো মৌসুম আসছে, দাম ধীরে ধীরে কমার কথা, কিন্তু উল্টোটা হচ্ছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের।”

আরেকজন নিম্ন আয়ের ক্রেতা বলেন, “মাছ-মাংস কেনা তো দূরের কথা, এখন সবজি কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিবারের পুষ্টির জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা মূলত বৃষ্টিপাত এবং সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন।

জকিগঞ্জ বাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, এবছর অসময়ের বৃষ্টির কারণে খেত-খামারে সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বাজারে এখনো সবজির সরবরাহ কম। এ কারণেই দাম কিছুটা বেশি। তবে আশা করছি, আর কিছুদিনের মধ্যেই নতুন মৌসুমের সবজি বাজারে পুরোদমে আসা শুরু করলে দাম কিছুটা কমবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুম পরিবর্তনের এই সময়ে পুরোনো সবজির সরবরাহ কমে যায় এবং নতুন সবজি পুরোপুরি বাজারে আসতে কিছুটা সময় লাগে। এ ছাড়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেও অনেক সময় স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।এই পরিস্থিতিতে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা সরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা, মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফিরে আসবে। সব মিলিয়ে, জকিগঞ্জের সবজি বাজারে বিরাজ করছে এক অস্বস্তিকর অবস্থা, যেখানে দামের ঊর্ধ্বগতিতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।